মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০১:৪৪ অপরাহ্ন

করোনায় বৃটেনে বেকার হয়েছে লাখ লাখ মানুষ

করোনায় বৃটেনে বেকার হয়েছে লাখ লাখ মানুষ

স্বদেশ ডেস্ক: করোনা মহামারীতে বৃটেনের অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। দেশজুড়ে বেকার হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। অবশ্য শুধু বৃটেন নয়, বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গোটা বিশ্ব অর্থনীতি। রপ্তানি বাণিজ্যে চরম অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে বাণিজ্য ঘাটতি স্মরণকালের সর্বনিম্ন স্তরে নেমে গেছে। চলতি বছরে বৃটেনের অর্থনীতির যে পতন হয়েছে, তা দেশটির ৪০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। করোনার প্রথম ধাক্কায় বেকার হয়েছে প্রায় ৮ লাখ মানুষ। ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিক্সের তথ্য মতে, শুধুমাত্র গত আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ৩ লাখ ৭০ হাজার মানুষ বেকার হয়েছে।

কোভিড বিধি-নিষেধ এবং লকডাউনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রি। বিশেষ করে কারি শিল্পে বেশি প্রভাব ফেলেছে। রেস্তোরাঁগুলোতে কর্মসংস্থানের মারাত্মক পতন ঘটেছে। রেস্তোরাঁ, হোটেল এবং রিসোর্টসহ সেবা ও আতিথেয়তার ক্ষেত্রে প্রায় ৩ লাখ শ্রমিক বেকার হয়েছেন। রিটেইল শপগুলি বন্ধ করতে বাধ্য হওয়ায় তাদের ১ লাখ ৬০ হাজার এবং খুচরা দোকানের ৮৯ হাজার জব চলে গেছে। এই পরিসংখ্যান কেবলমাত্র কোম্পানির বেতনভুক্ত কর্মীদের। আরও হাজার হাজার নৈমিত্তিক কর্মী এবং ফ্রিল্যান্সাররাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।

প্রকৃতপক্ষে বৃটেনে বেকারত্বের হার কত? কত লোকের কাজ নেই? তা বলা মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। কোভিড-১৯ অর্থনীতিতে আঘাত হানতে থাকায় নিয়োগকর্তারা বেকার হয়ে পড়েছেন। হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান বন্ধ অথবা প্রায় বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। দেশের বেশির ভাগ অংশ ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলার ঝুঁকিতে রয়েছে। ফলে বেকারত্বের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলেছে।

অফিস অফ ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্স (ওএনএস) এর মতে, সাম্প্রতিক বেকারত্বের হার আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ছিল ৪.৯ শতাংশ। এটি পূর্ববর্তী তিন মাসে তুলনায় ০.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর অর্থ ১.৬৯ মিলিয়ন মানুষ বেকার ছিল। তবে এই সংখ্যাটি পূর্ববর্তী মাসগুলিতে নেয়া সমীক্ষার ভিত্তিতে তৈরি। এটা সম্পূর্ণরূপে আপ টু ডেট নয়। আগস্টে ভাইরাস সংক্রমণের হার কম থাকাকালীন কিছু ডেটা সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের বিশাল অংশ তখন খোলা ছিল।

ওএনএস নিয়মিত পরিসংখ্যানও জোগাড় করে। এতে দেখা যায়, অক্টোবর মাসে বেকারত্ব বেড়েছে। তখন সারা দেশে করোনাভাইরাস বিধি-নিষেধ কঠোর করা হয়েছিল। যেহেতু পরিস্থিতি এখন আরো অবনতি হয়েছে, তাই  বেকারত্বের হার যে আরও বেশি, তাতে কোন সন্দেহ নেই।

বেকারত্ব কেন বাড়তে শুরু করেছে? করোনাভাইরাস লকডাউনের কারণে দোকান, বার, ভ্রমণ এবং বিনোদন প্রতিষ্ঠানের মতো ব্যবসা বন্ধ করতে হয়েছে। অনেকে বাধ্য হয়ে কর্মী ছাটাই করেছেন। তাদের সমস্ত কর্মী রাখার সামর্থ্য ছিল না। ফলে আগস্ট থেকে অক্টোবর সময়কালে রেকর্ড সংখ্যক রিন্ডানড্যান্সি হয়েছে। যার পরিমাণ ৩ লাখ ৭০ হাজার।  নভেম্বরে ইংল্যান্ড ব্যাপী লকডাউন ঘোষণার পরে বেকারত্ব আরো অনেক বেড়েছে।

গভর্ণমেন্ট ইকোনমিক ওয়াচডগ সুত্র অনুযায়ী ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইউকে বেকারত্ব ২মিলিয়ন বা ২০ লাখে পৌঁছাবে। এটি কর্মক্ষম জনসংখ্যার ৭.৫ শতাংশ। ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, বেকারত্বের হার পরের বছরের এপ্রিল থেকে জুনে ৭.৭ শতাংশ শীর্ষে পৌঁছাবে। ব্যাংক স্বীকার করেছে, আগামী বছর বেকারত্ব সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা খুব কঠিন। এটি ১০ শতাংশ হিসাবেও বৃদ্ধির আশংকা রয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে নতুন বাণিজ্য সম্পর্কের ওপর আরো অনেক কিছূ নির্ভর করবে। যুক্তরাজ্যের আলোচনার ফলাফল এখনও অনিশ্চিত। জানুয়ারিতে ‘নো-ডিল’ ফলাফল আরও বেশি চাকরি ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

গত এপ্রিলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রক্ষেপণ করেছিল, ২০২০ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি ৩ শতাংশ সংকোচন দেখবে, যা ২০০৭-০৮ সালের মহামন্দার পর সবচেয়ে বড় সংকোচন। বাস্তবে অর্থনীতি এর চেয়ে অনেক বেশী সংকুচিত হচ্ছে। আইএমএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা সম্প্রতি বলেছেন, করোনা ভাইরাসের এই সংকটের কারণে বৈশ্বিক জিডিপি ১ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। সম্প্রতি আইএমএফ আগের ওই প্রক্ষেপণ পর্যালোচনা করে বলেছে, এবারের মন্দা ধারণার চেয়েও ভয়াবহ হবে। নতুন প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, অর্থনীতির সংকোচন ঘটবে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ।

অর্থনীতির এই করুণ দশায় নভেম্বর মাসে বৃটিশ চ্যান্সেলর সতর্ক করে বলেছেন, আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে দেশে বেকারত্বের সংখ্যা ২৬ লাখে পৌঁছাতে পারে। এই সমস্যা ইউরোপে আরো বেশী। পৃথিবীর অন্য অঞ্চলেও ব্যাপক হারে বেড়ে চলেছে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এক ঘোষণায় বলেছে, চলতি বছর ১৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিতে তারা তাদের কার্যক্রম জোরদার করছে। করোনা মহামারিতে লকডাউন ও বেকারত্ব বৃদ্ধির কারণে বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠার পর কোনো একক বছরে এই প্রথম এত সংখ্যক মানুষের খাদ্য সহায়তা দিতে হচ্ছে ডব্লিউএফপিকে।

এদিকে শুধুমাত্র করোনা ভাইরাসের জন্য বৃটেনে টিকাদান কর্মসূচিতে প্রায় ১২ বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় হবে। উৎপাদন, ক্রয় এবং বিতরণসহ টিকাদান কর্মসূচীর জন্য এই ব্যয় হবে। এ অবস্থায় সরকার বলছে, করোনা ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলার জন্য এটি আরো অধিক গুরুত্বপূর্ণ। ফলে সরকার দেশের জনগণকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। তবে করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে বৃটেনকে মুক্ত হতে এখনও অনেক সময় লাগবে বলেই মনে হচ্ছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877